আল্লাহর কাছে তাদের বিচার চাইছি

Sraboni-Picশেরপুর: ‘পাঁচ বছর নিরাপদ হেফাজতে থাকার পর আজ মুক্ত হয়ে খুব ভাল লাগছে। বিনা অপরাধে আমার জীবন থেকে পাঁচটি বছর হারিয়ে গেছে। এজন্য যারা দায়ী, আল্লাহর কাছে তাদের বিচার চাইছি।’
ফরিদপুরের একটি সেফহোমে দীর্ঘ পাঁচ বছর নিরাপদ হেফাজতে থাকার পর নিজ জিম্মায় মুক্তি পাওয়ার পর এভাবেই তার অভিব্যক্তি জানান শ্রাবণী (১৯)।
শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইদুর রহমান খান ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রাবণীকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। তিনি শেরপুর সদর থানার একটি মামলার ‘ভিকটিম’ হিসেবে পাঁচ বছর সেফহোমে বাস করেন।
শ্রাবণী নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার সাটিয়ারপাড় এলাকার কাশেম মিয়া ও শিলা বেগমের মেয়ে। জন্মের মাত্র তিনদিন পর তার মা মারা যান।
আদালত সূত্রে মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ২০১০ সালে নরসিংদীর জনৈকা নাজমা কাজ দেয়ার কথা বলে ১৪ বছরের কিশোরী শ্রাবণীকে শেরপুরের নকলা উপজেলা সদরের শাহিনের কাছে দিয়ে যান। পরবর্তীতে শাহিন ও তার সহযোগী সুমন শ্রাবণীকে শেরপুর সদর উপজেলার আলিনাপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের কাছে দিয়ে দেন। এখানে রহিম ও তার সহযোগী মায়া কিশোরী শ্রাবণীকে পতিতালয়ে পাচারের চেষ্টাকালে এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে সংবাদ দেয়।
পরে সদর থানা পুলিশ ২০১০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আলিনাপাড়া এলাকার রহিমের বাড়ি থেকে শ্রাবণীকে উদ্ধার করে শেরপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৫/১ ধারায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় রহিম ও মায়াকে আসামি এবং শ্রাবণীকে সাক্ষী করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
শ্রাবণীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন বা কোনো উপযুক্ত অভিভাবক না থাকায় ওইসময় আদালতের নির্দেশক্রমে তাকে (শ্রাবণী) ফরিদপুরের একটি ‘সেফহোমে’ পাঠানো হয়। এই হোমে দীর্ঘ পাঁচ বছর নিরাপদ হেফাজতে থাকার পর শ্রাবণী ২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নিজ জিম্মায় মুক্তিলাভ করেন। নিজ জিম্মায় মুক্তি দেয়ার বিষয়ে শ্রাবণীর পক্ষে আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী মো. আল আমিন। তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন শেরপুরের মানবাধিকার কর্মী বেগম আশরাফুন্নাহার।
এদিকে, শ্রাবণী জানান, তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। সেফহোমে থাকার সময় দর্জি, পার্লার, ব্লক-বাটিক, ব্যাগ, নকশী কাঁথা, হস্ত ও কুটির শিল্পের কাজ শিখেছেন। এছাড়া বিভিন্ন খাবার তৈরির কাজও জানেন।
মুক্তিলাভের পর কোথায় যাবেন জানতে চাইলে অশ্রুসজল চোখে ১৯ বছর বয়সী শ্রাবণী জানান, পাঁচ বছর বাবা বা অন্য কোনো আত্মীয় তার খোঁজ নেননি। তার নানা বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার নয়াহাটি গ্রামে। নানা রঙ্গু মিয়া মারা গেছেন। তিনি এখন নানি রহিমা বেগমের কাছে যাবেন। পরবর্তীতে উন্নয়ন সংগঠন ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের’ পারভীন আপার কাছ থেকে একটি মেশিন এনে দর্জির কাজ শুরু করবেন। তার মুক্তির জন্য যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবার প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত মানবাধিকার কর্মী আশরুফুন্নাহার জানান, শ্রাবণী মুক্তি পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। তার (শ্রাবণী) প্রয়োজনে তিনি সব সময় পাশে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *