আইসিসি থেকে কামালের পদত্যাগ
ঢাকা: আইসিসির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ দুপুর একটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে ‘ছোট’ করে এ পদে থাকতে চাই না।’
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আইসিসির সংবিধানের ৩.৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী আইসিসির যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি দেয়ার অধিকার কেবল সভাপতিরই আছে। যেই অনুযায়ী, ২৯ তারিখ মেলবোর্নের ফাইনালে ট্রফি দেয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু আমি সেটা দিতে পারি নাই। কেন দিতে পারিনি, আপনারা জানেন, সবাই জানে।’
কামাল দাবি করেন, বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার-ফাইনাল নিয়ে কিছু মন্তব্য করাতেই তাকে ফাইনালের বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিতে দেয়া হয়নি।
এই সম্পর্কে খোলাসা করে তিনি বলেন, সেদিন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) স্পাইডার ক্যামেরা ছিল না। বিশ্বকাপে এই প্রথম দেখা গেল এমসিজিতে স্পাইডার ক্যামেরা নেই। এছাড়া এ ধরনের টুর্নামেন্টে বড় পর্দার মালিক আইসিসি। অথচ সেদিন বড় পর্দায় লেখা উঠল, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’- এটার মানে কী? আইসিসি পরিচালিত স্কোরবোর্ডে এটা থাকবে কেন? ওই সময় বাংলাদেশ থেকে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। সবার প্রশ্ন, আপনি থাকতে এসব কেন হচ্ছে? এমসিজির গ্যালারিতে দেখা গেল প্ল্যাকার্ডে লেখা আইসিসি মানে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’!
১৯ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড এবং পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দারের ‘বিতর্কিত’ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১০৯ রানে পরাজয় বরণ করে। স্পষ্টতই ওইদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল আম্পায়াররা। যা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে।
ওই ম্যাচের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো বাংলাদেশ। ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইসিসি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামালও। কামাল নিজেও সেদিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নই।’
এরপর আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিচার্ডসন এক বিবৃতিতে মুস্তফা কামালের মন্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেন। এমনকি ফাইনালের আগে আইসিসির এক সভায় কামালকে তোপের মুখে পড়তে হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বিতর্ক এড়াতে কামালের বদলে ফাইনালের বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন।
তবে আইসিসির ৩.৩ ধারা অনুযায়ী, বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার কথা ছিল মুস্তফা কামালের। কামালকে সেটা থেকে বঞ্চিত করে আইসিসি কার্যত সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। এদিকে ইঙ্গিত করে কামাল বলেন, ‘যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে তাদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর সবাইকে আমি তাদের অন্যায়ের কথা জানাতে চাই।’
বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রীকে কেন ট্রফি দিতে দেয়া হলো না- সেই ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ফাইনালের আগে আইসিসির একটা অনানুষ্ঠানিক সভা হয়েছিল। সেখানে ওই বিতর্কিত ব্যক্তিটা (এন শ্রীনিবাসন) ছিলেন। আমাকে তিনি বললেন, আমার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে নতুবা বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হবে। আমি বললাম, ১৬ কোটি মানুষের জন্য এমন বিবৃতি দিয়েছি। তাদের বাদ দিয়ে এটা প্রত্যাহার করতে পারব না। তিনি তখন বললেন, তাহলে আপনি ট্রফি দিতে পারবেন না। তখন আমি বললাম, আমি এখানে সভাপতি হিসেবে এসেছি। সভাপতি ছাড়া ট্রফি দেয়ার অধিকার কারও নেই। এটা সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইলে পূর্ণ ১০ সদস্যের ৮ সদস্যের সম্মতি লাগবে। এরপর বার্ষিক সভায় সেটা ওঠাতে হবে। আর সেই সভার সভাপতিত্ব আমিই করব। সেদিনের মন্তব্যের জন্য আপনারা আমার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারেন।’