ফটিকছড়িতে উজাড় হচ্ছে সামাজিক বনায়ন : নীরব চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটি
শওকত হোসেন করিম, ফটিকছড়ি(চট্টগ্রাম) : ফটিকছড়ির ৫টি রেঞ্জের ১৪টি বনবিট থেকে রাত-দিন সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে বনাঞ্চল। প্রশাসন ও বনবিট কর্মকর্তাদের গাড়ী প্রতি চাঁদা দিয়ে এসব কাঠ পাচার চলছে প্রকাশ্যে। এনিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা চোরাচালান কমিটি ও চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্র জানায়, হাটহাজারী রেঞ্জের সর্তা বনবিট, শোভনছড়ি বনবিট, নাজিরহাট ডিপো, হাজারীখীল রেঞ্জের বারমাসিয়া বনবিট, হাজারীখীল বনবিট, ফটিকছড়ি বনবিট, নারায়নহাট রেঞ্জের ধুরুং বনবিট, নারায়নহাট বনবিট, দাঁতমারা বনবিট, বালু খালী বনবিট, হাসনাবাদ রেঞ্জের হাসনাবাদ বনবিট, তারাখোঁ বনবিট, এবং করেরহাট রেঞ্জের করেরহাট বনবিট ও চেক ষ্টেশন, কয়লা বনবিট, হেঁয়াকো বনবিট, আঁধার মানিক বনবিট বৃহত্তর ফটিকছড়ির বনজ সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারন ও সংরক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত। এসব বনবিট এলাকায় সরকারী অর্থে সৃজনকৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে সেগুন, চাপালিশ, গামারি, কড়ই, গর্জন, হাইব্রিট, আকাশমণি, জারুল, জাম সহ নানা প্রজাতির ছোট বড় গাছ কেটে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই গাড়ি ভর্তি করে রাতভর সড়ক পথেই চট্টগ্রাম শহর, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইটভাটা, জেলার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ইটভাটা গুলোতে নির্বিঘেœ পাচার করে দেয়। আর এসব বনজ সম্পদ রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের গাড়িপ্রতি ৩শ, ৫শ, ৮শ, টাকার করে চাঁদা দিয়ে রাতদিন সমান তালে পাচার হচ্ছে মূল্যবান কাঠ ও জালানী কাঠ। একদিনে ফটিকছড়ি থেকে কত ঘনফুট কাঠ বা কত কোটি টাকার কাঠ পাচার হচ্ছে তা নির্নয় করা দূষ্কর।
এদিকে সর্তা বনবিটে গাছ কাঠার বিষয়ে দন্দ্ব হলে তিন বন প্রহরীকে ইউপিডিএফ (পাহাড়ি সন্ত্রাসী) দিয়ে দুইমাস আগে অপহরণ করানো হয়। পরে তারা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায়।
সরেজমিনে শোভছড়ি, সর্তা, বারমাসিয়া, ধুরুং, নারায়ণহাট, বালুখালী, দাঁতমারা, তারাখো, হাছনাবাদ বনবিট এলাকা পরিদর্শনে দিন রাত প্রকাশ্যে গাছ কাটা ও প্রচারের সত্যতা মেলে। শোভনছড়ি এলাকার কাঠুরিয়া জলিল সর্দার জানান, বড় মিয়া (বিট কর্মকর্তা) কে টাকা দিয়ে ইট ভাটার জন্য লাকড়ী কাঠছি।
নারায়ণহাটের কাঠ শ্রমিক আবুল ফজল, দেলোয়ার, দাঁতমারার শ্যামল, বালূখালীর জামাল জানান, সরকারী নিলামে বিক্রি হওয়া উড়লটের গাছ কাটার নাম করেও ২০০৫-০৬ সালের সামাজিক বনায়নের বিশাল বিশাল বাগান কেটে পাচার করা হচ্ছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ঠ বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে। প্রতিদিন তিন ভাগের দুই ভাগ গাছ ও লাকড়ি যাচ্ছে সামাজিক বনায়নের বাগানের।
নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী আকবর কাজী বলেন, কিছু কাঠ যে চুরি বা পাচার হচ্ছে না তা বলা যাবেনা। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি রোধ করতে। সরকারী নিলামের গাছ কাটার ব্যাপারে সংশ্লিদের সতর্ক করা হয়েছে।
হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইছমাইল হোসেন বলেন, সর্তা বন বিটের কাঠ পাচার ওশ্রমিক অপহরনের ঘটনায় ৬জনকে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। নতুন গাছ কাঠার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। মাঝে মাঝে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। নিলামের গাছ কাঠার নামে সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, তদন্ত করে বন বিভাগের লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।