বাগেরহাটে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অবহেলার অভিযোগ এক প্রসূতি মা ও শত শত রোগির
বাগেরহাট প্রতিনিধি : “আমার গলা বুক জ্বলে যাচ্ছে, আমি মরে যাব-আল্লাহ আমাকে বাচাঁও ; বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর অজ্ঞান হয়ে পড়ি”। বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সীমা আক্তার নামে একজন প্রসূতি মায়ের এমনই বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, আমার মত আর কারো যেন এ ভাবে যন্ত্রনা ভোগ করতে না হয়। এমন প্রত্যাশা করে সীমা আক্তার বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা: বাকির হোসেন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। শুধু সীমা আক্তার নয়, এ ভাবে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসা শত শত রোগি ও স্বজনদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রতিনিয়ত ।
লিখিত অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী গ্রামের আনিছুর রহমানের স্ত্রী সীমা আক্তার গত ১৭ মার্চ রাতে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। নরমাল ডেলিভারী না হওয়ায়, পরের দিন ১৮ মার্চ দুপুরে চিকিৎসক সিজারের জন্য সীমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত নার্স ও মেডিকেলের ষ্টুডেন্টরা সিজারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে ট্যাবলেটের সাথে পানির পরিবর্তে তলর পদার্থ খাওয়ানো হয়। মুহুর্তের মধ্যে গলা-বুক জ্বালা পোড়া করতে থাকে। সে সময় সীমা বলতে থাকে “আমাকে কি খাওয়ালেন আমার গলা-বুক জ্বলছে আমাকে বাচাঁন’। তখন কর্তব্যরত নার্স বলেন, পুরানো টিউবওয়েলের পানি তাই এ রকম লাগছে। পরে প্রচুর পানি খাওয়ানো হয় এবং পরপর দুটি ইনজেকশন পুশ করার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে সীমা। তারা সীমার স্বজনদের জানায়, রোগির অবস্থা ভালো না। বাচ্চা অথবা মা যে কেউ মারা যেতে পারে, দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ভাবে কয়েক ঘন্টার পর প্রসূতি মা সীমার সিজার করা হয়। এতটা সময় যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে সীমা কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। চিকিৎসার নামে যারা দায়িত্বে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা করান, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবী করেন সীমা। সীমার স্বজনদের দাবী, ট্যাবলেটের (ওষুধ) সাথে পানির পরিবর্তে স্পীরিট খাওয়ানো হয়েছে। এ ধরনের চিকিৎসা সেবার মনোভাব থেকে তাদের সরে যাওয়া উচিৎ। হাসপাতালের কর্মকর্তারা বিষয়টি যাতে মিডিয়ায় লেখালেখি না হয় সে ব্যাপারে সীমার স্বজনদের বারবার অনুরোধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সদর হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি আজ নতুন নয় বলে দাবী করেছেন স্থানীয়রা। চিকিৎসকরা যথা সময়ে কর্মস্থলে না আসায় দুরদুরান্ত থেকে আসা রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। টিকিট নেয়া থেকে শুরু করে পদে পদে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অনেক সাধারণ রোগীরা নিরুপায় হয়ে বলতে থাকেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমাদের দূর্দশা দেখার কেউ নেই।’
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা: বাকির হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয় সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: বিদ্যুৎ কান্তি পালকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।