জাতীয় ৪ নেতা হত্যা : পলাতক খুনির মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ : কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত হওয়া) কিসমত হাশেম কানাডায় মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে (বাংলাদেশ সময়) কানাডার মন্ট্রিলে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত হাশেম শকু।
কিসমত হাসেম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তবে সে মামলায় খালাস পেয়েছেন।
কাউন্সিলর শওকত হাসেম জানান, ভোর পৌনে ৬টায় কানাডার মন্ট্রিলে কিসমত হাশেম মারা যান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে মন্ট্রিলে দাফন করা হবে। কিসমতের স্ত্রীর নাম পারভীন হাশেম। তাদের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই।
২০০৯ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণায় কিসমত হাশেম খালাস পান। তবে ওই সময়েই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল) রেড ওয়ারেন্ট জারি করে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই ওয়ারন্টে জারি ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনীর একাংশ। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্ষমতা দখল নিয়ে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে ওই বছর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। ২০০৪ সালের অক্টোবরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ওই হত্যাকাণ্ডে তিন সেনা কর্মকর্তা রিসালদার (অব.) মুসলেম উদ্দিন, দফাদার (বহিষ্কৃত) মারফরত আলী শাহ ও দফাদার (বহিষ্কৃত) আব্দুল হাসেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া ক্যাপ্টেন কিসমত হাশেমসহ ১২ কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। তাদের তিনজনকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। পরে হাইকোর্ট হয়ে মামলাটি আপিল বিভাগে এলে চূড়ান্ত রায়েও কিসমত হাশেমের দণ্ড বহাল থাকে।
পাঁচত্তরের ৩ নভেম্বর চার নেতাকে হত্যার পর পরই দেশ ত্যাগ করেন কিসমত হাশেম। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে গোপনে কয়েকবার দেশে আসা- যাওয়া করেন তিনি। তবে নব্বইয়ে সামরিক শাসনের অবসানের পর কিসমতকে আর দেশে দেখা যায়নি। তার পৈতৃক বাড়ি নারায়ণগঞ্জ শহরের ডনচেম্বার এলাকায়।