নিখোঁজের ২ বছর পার হলেও বেনাপোল পৌর প্যানেল মেয়র তুহিনকে উদ্ধারে অগ্রগতি নেই
শেখ নাসির উদ্দীন, বেনাপোল থেকে : বেনাপোল পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তারিকুল আলম তুহিন নিখোঁজের ২ বছর পেরিয়ে গেলেও গোয়েন্দা পুলিশ আজও তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি। বেনাপোল পৌরসভার প্যানেল মেয়র তারিকুল আলম তুহিনের স্বজনদের আহাজারিতে এখনও ভারি হয়ে রয়েছে পুরো এলাকা। বৃদ্ধ পিতা-মাতা ডা. ইউসুফ আলম ও আনোয়ারা বেগম ছেলেকে ফিরে পাবেন কিনা জানেন না। কান্না থামছে না স্ত্রী সালমা খাতুনেরও ।
বেনাপোল পৌর সভার প্যানেল মেয়র ও ছাত্রলীগের সভাপতি তারিকুল আলম তুহিন নিখোঁজের ২ বছর পার হলেও তাকে উদ্ধারে কোন অগ্রগতি হয়নি আজও।
তুহিন উদ্ধারের দাবিতে ৭ মার্চ সকালে বন্দর নগরী বেনাপোলের সোনালী ব্যাংক ভবনের সামনে পৌর ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু,এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুজজামান, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজ আহম্মেদ,সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন। পৌর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন প্রশাসনের গাফিলতির জন্য পৌর প্যানেল মেয়র তারিকুল আলম তুহিন নিখোঁজের দুই পার হলেও আজও পর্যন্ত প্রশাসন তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। অবিলম্বে তুহিনকে জীবিত উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
২০১৩ সালের ৭ মার্চ থেকে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি নিখোজ রয়েছেন। ঢাকার শেরেবাংলা নগর ন্যাম ফ্ল্যাটে যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বাসায় ওইদিন দুপুর পর্যন্ত তিনি অবস্থান করছিলেন। এরপর থেকে তাকে আর মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি। তার বড়ভাই শরিফুল আলম শাহিনের অভিযোগ,তুহিনকে অপহরন করা হয়েছে। তুহিনের বড়ভাই বেনাপোল কলেজের প্রভাষক শরিফুল আলম শাহিন বলেন, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ বেনাপোলে রাতে র্যাব তুহিনের বাড়িতে হানা দেয়। তবে তুহিন ওই সময় বাড়ি ছিল না। পরদিন সকালেই সে (তুহিন) ঢাকা চলে যায়। নিখোজ হওয়ার পাঁচদিন পর তার চাচাতো ভাই সুমন বাদি হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারন ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে সেটি নিয়মিত মামলা হিসেবে পুলিশ গ্রহন করে। মামলাটি ৭ মাস ধরে ধামাচাপা থাকে। পরে মামলাটি ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান শরিফুল আলম।
মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে যাওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাঠে নামে। এরপরই বেনাপোলের ছাত্রলীগ নেতা জুয়েলকে যশোর থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে ঢাকায় নিয়ে যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই ঘটনায় নাটকীয় মোড় নেয়। প্রথমেই বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের পিসিপিআর যাচাই করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ঝিকরগাছা, শার্শা ও বেনাপোল থানায় পিসি পিআর যাচাইয়ের জন্য ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনটি নোটিশ আসে। স্থানীয় এমপির পিএ, একজন আওয়ামীলীগ নেতা ও একজন যুবলীগ নেতার নামে নোটিশ আসে। তবে তার আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এভাবে ২ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও নিখোজ তুহিনের সন্ধান মেলেনি।
তুহিনের স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন,তার স্বামী নিখোজ হওয়ার পর বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রতারক একটি চক্র তুহিন তাদের কাছে আছে এই ফাঁদ পেতে আমার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তুহিনকে তো ফিরে পায়নি উপরন্ত আমাদের কাছে থাকা টাকা ও ধারদেনা করে প্রতারকদের দিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব। তুহিন নিখোঁজের এক মাস পর তার একটি ছেলে হয়েছে। যার বয়স এখন ২৩ মাস। তিনি আরও বলেন, তার সন্তান এখন কথা বলতে শিখছে। অন্যের সন্তানরা তাদের পিতাকে বাবা বলে ডাকতে দেখলে তার ছেলে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে সে আমাকে বলে আম্মু আমার বাবা কই। তখন বুকটা ফেটে যায় এবং তাকে আশ্বাস দিয় তোমার বাবা আসবে। এখনও তুহিনকে ফিরে পাওয়ার আশায় পথ চেয়ে আছি।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত তাদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।