আতœহত্যা নয় খোরশেদা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে
ফটিকছড়ি(চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : ফটিকছড়িতে গত ২ফেব্র“য়ারি রাতে নিহত তিন সস্তানের জননী গৃহবধূ খোরশেদা বেগমের লাশের ময়নাতদন্তে সাত জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনার দেড় মাস পরও পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বরং মামলার এক নম্বর আসামিকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
ওই দিন লাশের প্রাথমিত তদন্তে সুরতহাল রিপোর্টে আতœহত্যা বলে উল্লেখ করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফটিকছড়ি থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক এসআই শফিকুর ইসলাম।
ঘটনার ১৬ দিন পর ১৮ফেব্র“য়ারি ফটিকছড়ি থানায় রেকর্ডকৃত মামলায় ৯জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আসামিরা হলেন- আবুল হাশেম(৪৪), নুরুল আলম(৫০), মো. বদিউল আলম(৪৬), ফোরক আহমদ(৬০), ইয়াছমিন(৫০), হাছিনা বেগম, ফুলবানু, নুর নাহার, এবং শাহানু।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক দেব প্রতিম বড়–য়া স্বাক্ষরিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহবধূর ঘাড়ের বাম পাশে এক ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চি ব্যাসের লম্বা গভীর একটি ক্ষত রয়েছে। বাম হাতে বাহুতে পাঁচ ইঞ্চি বাই আধা ইঞ্চি লম্বা আঘাতের দাগ রয়েছে। মাথার পেছনে এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি কাটা দাগ রয়েছে। যা দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ডান বাহুর উপরে এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি ক্ষত রয়েছে। বাম হাতের পেছনে আধা ইঞ্চি বাই আধা ইঞ্চির ক্ষত রয়েছে। ডান পায়ের নিচে আধা ইঞ্চি বাই আধা ইঞ্চি ক্ষত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃতের শরীরে এমন কোন রোগ নির্ণয় করা যায়নি, যা দ্বারা তার মৃত্যু ঘটতে পারে।
নিহত গৃহবধূর বড় ভাই এবং মামলার বাদি মো. শফি অভিযোগ করেছেন, ঘটনার দিন থেকেই ফটিকছড়ি থানা পুলিশ রহস্যজনক আচরণ করছে। ঘটনার দিন দুপুর ২টায় থানায় লাশ আনা হলেও ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে কালক্ষেপণ করে। পুলিশ অভিযুক্তদের সাথে নাজিরহাটে বৈঠক করে রাত সাড়ে ৯টায় লাশ মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ঘটনার পর মামলা করতে গেলে প্রথমে তারা মামলা নেয়নি। অনেক দেরিতে মামলা নিয়ে তার বোনের হত্যাকারী আবুল হাশেমকে পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ। শফি অভিযোগ করে বলেন, খোরশেদার স্বামী আবুল হাশেম বিদেশ থেকে আসার আগেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর হুমকি দিয়েছিল। সে দেশে এসে নিজের তিন শিশু সন্তানের কথা চিন্তা না করে নিজের স্ত্রীকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করবে তা তারা কখনো চিন্তাও করতে পারেনি।
হত্যাকান্ডের পর খোরশেদা স্ট্রোক করেছে বলে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে প্রথমেই ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করে। এখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও একই চেষ্টা করছেন। মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করছে না বলে তার অভিযোগ।
নিহত গৃহবধূ খোরশেদা বেগমের বড় ছেলে মো. সায়েদ(১১) বলেন, তাদেরকে যেদিন চট্টগ্রাম শহর থেকে তার পিতা তাদের গ্রামের বাড়ি দৌলতপুর নিয়ে যায়, সেদিন রাতে সে, বোন সাদিয়া(৭) এবং সাড়ে তিন বছর বয়সী শোয়েবকেও তাদের মায়ের সাথে থাকতে দেয়নি। ওই রাতে তারা তিনজনকে চাচা-জেঠাদের ঘরে রাখা হয়। সকাল ৭টার দিকে তার পিতা আবুল হাশেম তাকে এনে তার মায়ের লাশ দেখায়। তখনও কক্ষের লাইট বন্ধ ছিল। মাকে খাটে অস্বাভাবিক অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখে সে ভয়ে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। তবে ঘরে প্রবেশের আগেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল্লাহ তাকে শিখিয়ে দেয় যে, কেউ জিজ্ঞাসা করলে সে যেন বলে ‘সকালে মায়ের সাথে তার কথা হয়েছে’।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সফিকুর ইসলাম বলেন, সুরতহাল রির্পোটে আঘাতের চিহ্ন আছে উল্লেখও করেছি। বাহিরে থেকে দেখে মৃত্যুর প্রাথমিক কারণগুলোর কথা সুরতহালে উল্লেখ আছে। কিন্তু ভিতরের আঘাত গুলোও তো আর বাহির থেকে দেখা যায় না তাই আতœহত্যা বলে ধারণা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পর একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই অপমৃত্যু মামলার প্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত করে ঘটনাটি হত্যাকান্ড হলে আসামী চিহ্নিত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়া করা হয় এটা নিয়ম। নিহত মহিলার ভাইয়ের দেওয়া মামলাটিও রুজু করা হয়েছে। কোন আসামী ছাড় পাবে না। যেহেতু ময়না তদন্তে হত্যাকান্ড এসেছে, সেহেতু কোন আসামীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার উত্তর এএসপি আ ফ ম নিজাম উদ্দিন বলেন, বাদীর উল্লেখিত অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। যথাযত নিয়ম অনুসরণ করে মামলা নেওয়া হয়েছে। শিগ্রই আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।