সুমিকে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিল খুনিরা

Sumi.23ঢাকা : ভয়ঙ্কর আর অমানবিকভাবে সুমি আক্তার শিমুকে নির্যাতনের পর হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন খুনিরা। ঘটনার পর পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৬ খুনির মধ্যে চারজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

৯ মার্চ রাতে রাজধানীর ফকিরাপুলে উপবন হোটেলের পাশে আহসান মঞ্জিলের ছাদে সুমিকে ৭ ঘণ্টা নির্যাতনের পর জবাই করে হত্যা করে খুনিরা। হত্যার পর তার শরীরের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন করে রশি দিয়ে নিচে নামিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দেয়। শুধু তাই নয় সুমির মুখমণ্ডলও আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়।

আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় ৮ জন। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিচ্ছিন্ন করার কাজে সবারই কোনো না কোনো ভূমিকা ছিল।

সুমি হত্যায় অংশ নেয়া গ্রেপ্তারকৃত ৬ আসামি হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম (২৭), হানিফ (২৬), রাতুল আহাম্মেদ (২৩), নুরুন্নবী শাওন (১৯), মো. সুজন (২৩) ও মো. সুমন ওরফে তোতলা সুমন (২৪)।

হত্যায় অংশ নেয়া অপর আসামি মোবারক হোসেন মন্টি শনিবার রাতে মতিঝিলের টিটিপাড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আলম নামে অপর একজন হত্যাকারী পলাতক রয়েছেন।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সুমির স্বামী মাদক ব্যবসায়ী নাসির কয়েকদিন আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এর জন্য সাইদুল, সুজন, মন্টি, হানিফকে দায়ী করে বিভিন্ন স্থানে সুমি বলে বেড়ায়। অন্যদিকে আসামিরা ধারণা করে সুমি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে, তাই সে তাদেরও ধরিয়ে দিতে পারে। আর এ কারণে তারা সুমিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে মন্টির বাসা আহসান মঞ্জিলের নিচ থেকে সুমিকে তারা মুখ চেপে ধরে ছাদে নিয়ে যায়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে, মুখে কাগজ মুড়িয়ে স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এসময় মন্টি সুমিকে জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করায় এবং রাতভর নির্যাতন করে গলাকেটে হত্যা করে।’

হত্যা ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিচ্ছিন্ন করার কাহিনী বর্ণনা করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাইদুল ও সুজন ছুরি দিয়ে সুমিকে জবাই করে। মোবারক হোসেন মন্টি চাপাতি দিয়ে সুমির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এরপর সুজন সুমির ডান পা কাটে, রাতুল বাম পা, সাইদুল ও সোহেল ডান হাত কাটে এবং আলম ছুরি দিয়ে সুমির পেটে আঘাত করে।’

বিচ্ছিন্ন করার পর অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিচে ফেলার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সোহেল হাত দুইটি ওয়াসার খালি স্থানে ফেলে দেয়, সুজন পা দুইটি হোটেল উপবন ও মন্টির বাসার চিপায় ফেলে দেয়। আর সবাই মিলে সুমির দেহ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রশি দিয়ে ওয়াসার টিনশেড ঘরে টিনের উপর ফেলে দেয়। এরপর সুমির মুখমণ্ডল কেরাসিন দিয়ে ঝলসে দেয় কেউ যেন চিনতে না পারে।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খুনিরা এক ধরনের মানসিক বিকৃত সম্পন্ন লোক।’ সাইদুল এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এর আগেও ঘটিয়েছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *