ঝিনাইদহে চলছে রেজিষ্ট্রিবিহীন সীমকার্ডের রমরমা বাণিজ্য

jhinaidah-map-ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ কমাতে এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করতে মোবাইল অপারেটরদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য সরবরাহ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিলেও ঝিনাইদহে অবাধে বিক্রয় হচ্ছে রেজিষ্ট্রিবিহীন সিমকার্ড। গত নভেম্বরে বিটিআরসি ও অ্যামটব এর সঙ্গে এ বিষয়ে যৌথ ভাবে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঝিনাইদহে চলছে রমরমা রেজিষ্ট্রি বিহীন সীমকার্ড ব্যবসা। ঝিনাইদহে সব চেয়ে বেশি পরিমানে রেজিষ্ট্রি বিহীন সীমকার্ড বিক্রি করে থাকে গ্রামীণফোন। এ বিষয়ে বিক্রয় প্রতিনিধিদের সবচেয়ে বেশি চাপে রাখে ঝিনাইদহে কর্মরত গ্রামীন ফোনের ৫ জন অফিসার। গত বছরে ইসলামী ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখায় ২৯ লক্ষ টাকা ডাকাতি হয় আর সেই ডাকাতির অনুসন্ধানে নামে ঝিনাইদহের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রায় ৭/৮ মাস অনুসন্ধান করে গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে সরকারী কেসি কলেজের সামনের মার্কেটের একটি দোকান থেকে রেজিষ্ট্রিবিহীন এই সীমকার্ড ক্রয় করা। এই সিমকার্ড নিয়ে একদিন বেশ নড়েচড়ে বসে ঝিনাইদহের গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু দুঃখের বিষয় অজ্ঞাত কারনে তা থেমে যায়। গত বছরের নভেম্বরে ঝিনাইদহের চাকলা পাড়ায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভুয়া আইডি কার্ডসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। ঝিনাইদহ জেলার জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে নির্বাহী মেজিস্ট্রেট অন্যান্য বিষয়ে অভিযান চালালেও ভুয়া রেজিষ্ট্রিবিহীন সিমকার্ডের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযান চালানো হয়নি। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যেকারনে বেড়ে যাচ্ছে নানা অপরাধ। একটি নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে ঝিনাইদহ জেলায় ৫টি মুঠো ফোন অপরেটররা প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২২ হাজার রেজিষ্ট্রিবিহীন সিমকার্ড বিক্রয় করে থাকে । সবচেয়ে বেশি বিক্রয় করে থাকে গ্রামীন ফোন অপরেটররা তারপর বাংলালিংক পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অপরেটররা। বিটিআরসি এবং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেলার নামে মাইক এবং সাউন্ড বক্স বাজিয়ে এই সকল সিমকার্ড বিক্রয় করে থাকে। ঝিনাইদহে সবচেয়ে বেশি ভূয়া ভাবে সিমকার্ড চালু করে থাকে গ্রামীন ফোন ও বাংলালিংকের কয়েকজন অফিসার। তারা বিক্রয় প্রতিনিধি দিয়ে জোর পুর্বক সিম বিক্রিতে বাধ্য করেন। তাদের কথা না শুনলে চাকুরী থাকে না। ফলে বাধ্য হয়ে এই অপরাধ মূলক কাজ করতে হয় বিক্রয় প্রতিনিধিদের। নিবন্ধনের জন্য ব্যবহারকারীর ন্যাশনাল আইডি ও ছবি বাধ্যতামূলক করা হলেও এখন সিম ক্রয় বা ব্যবহারের জন্য এসবের কোনটারই প্রয়োজন হয় না। দোকানে গিয়ে ১০০/১৫০ টাকা দিলেই পেয়ে যাবেন যে কোন অপারেটরের যত খুশি সিম। বিপদের বিষয় হল, প্রত্যেক অপারেটর তাদের অফিসের ফাইলে বিক্রিত প্রত্যেকটি সিম-এর বিপরীতে ন্যাশনাল আইডি ও ছবি মজুদ রাখেন সরকারি অডিট থেকে রেহাই পাবার জন্য। দোকান থেকে নিবন্ধন ছাড়া সিম কিনলেও অপারেটর অফিসে সিম নিবন্ধন করা হয়ে যায় অটোমেটিক। জনশ্রুতি আছে যে, সিম বিক্রয়কারী দোকানদার ও এজেন্টরা বিভিন্ন সোর্স থেকে ছবি, ন্যাশনাল আইডি সংগ্রহ করে। এরপর নিজেরাই হাতের ছাপ দিয়ে নিবন্ধনপত্র পূরন করে দেদারসে সিম বিক্রি করে । প্রশ্ন হলো, কার সিম কে ব্যবহার করছে? এসব সিমের কোনটা দিয়ে যদি কোন অপরাধ সংঘটিত হয় তাহলে প্রকৃত অপরাধীকে কি সনাক্ত করা যাবে? নিরাপরাধ ব্যক্তি যার ভোটার আইডি ব্যবহার করা হয়েছে সে ফেঁসে যাবে কি না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *