কেশবপুরের মোষ্ট ওয়ান্টেড ডাকাত সর্দার ইউনুস বন্দুকযুদ্ধে নিহত ॥ এলাকায় মিষ্টি বিতরন
তন্ময় মিত্র বাপী,কেশবপুর (যশোর) : যশোর অঞ্চলের ত্রাস পুলিশের মোষ্ট ওয়ান্টেড ডাকাত সর্দার কেশবপুরের ইউনুস আলী ডাকাতি কালে যশোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। সোমবার রাত ২টার দিকে যশোর-মাগুরা সড়কের পাচবাড়িয়া সিনজেনটা ঔষধ কোম্পানির সামনে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধে যশোরের কেশবপুর থানায় পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরনসহ ৪৮ টা মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র সহকারি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে একটি ট্রাকের গতিরোধ করে ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে রাস্তার পাশে বাগানের মধ্যে হাত-পা চোখ বেধে ফেলে রেখে একদল ডাকাত যশোর-মাগুরা সড়কের পাচবাড়িয়া সিনজেনটা ঔষুধ কোম্পানির সামনে রাস্তায় গাছ কেটে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। এসময় টহল পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পেরে বেতার বার্তায় কোতয়ালী থানাকে অবহিত করে। দ্রুত কোতয়ালী থানা পুলিশ তাদের সাথে যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ রাস্তার উপর কেটে ফেলে রাখা গাছ সরাতে গেলেই ডাকাতদল পুলিশের উপর আচমকা বোমা হামলা ও গুলি বর্ষন করে। কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক বিধান কুমার বিশ্বাস জানান, ডাকাতির ঘটনা জানার সাথে সাথে তিনি নিজে এবং চাচড়া ফাড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক শোয়েবউদ্দীন আহমেদ ও উপ-পরিদর্শক জামালউদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি শক্তিশালী টীম ঘটনাস্থলে পৌছানোর সাথে সাথেই বোমা হামলা ও গুলি বর্ষন করতে থাকে। এখানে প্রায় ঘন্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে ডাকাতদল পিছু হটতে বাধ্য হয়। ডাকাতরা ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও ৪/৫ টি শক্তিশালী বোমার বিষ্ফোরন ঘটায়। এসময় পুলিশও শর্টগানের ১৭ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। উভয় পক্ষের গোলাগুলির সময় বোমার ¯িপ্রন্টারের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল (৫৩৪) মোস্তাফিজুর রহমানের ডান পায়ে ক্ষত হয়ে গুরুতর আহত হন। ডাকাতরা কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের বাধন খুলে রাস্তার উপর থেকে গাছ সরাতে গেলে গুলিবিদ্ধ আহত এক ডাকাতকে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া ৪টি তাজা বোমা, ১টি রামদা, ১টি কুড়াল, ২টি শাবল, বিষ্ফোরিত বোমার কিছু আলামত উদ্ধার করেছে। এঘটনায় উপ-পরিদর্শক বিধান কুমার বিশ্বাস বাদি হয়ে ডাকাতির চেষ্টা এবং অস্ত্র আইনে কোতয়ালী মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি ডাকাত সর্দার ইউনুস মারা গেলেও অন্য আসামিরা আটক হয়নি। সহকারি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল জলিলের দেয়া তথ্যে আরো জানান, নিহত ডাকাত ইউনুসের বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ভালুকঘর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা, ২১টি ডাকাতি, ৬টি অবৈধ অস্ত্র, বোমা, চাঁদাবাজিসহ কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, তালা, পাটকেলঘাটা থানায় হত্যা, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র মজুদ, ছিনতাই, অপহরনসহ ৪৮ টা মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি অস্ত্র মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছে। নিহত ইউনুস একসময়ের ভালুকঘর এলাকার ত্রাস ডাকাত আজিজ বাহিনীর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করত। ২০০৯ সালে কেশবপুরের সাতবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতিকালে বাহিনী প্রধান আজিজ গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর ইউনুস দলের নেতৃত্ব দিয়ে অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ কেশবপুর পৌরসভার পানি সরবরাহের পাইপ লাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি’র উপস্থিতিতে যশোরের পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান (পিপিএম, বিপিএম,বার) ডাকাত ইউনুসের অবস্থান গোপনে পুলিশকে জানালে ৫০’হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়। মঙ্গলবার বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত ইউনুসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং অনেক জায়গায় মিষ্টি বিতরনের খবরও পাওয়া গেছে।
কে এই ইউনুস ডাকাত ?
“ ভাই সামনে আপনার বড় বিপদ। যা বলি সেভাবে চলেন, আমাকে অবহেলা করলে দুনিয়া থেকে হারিয়ে যাবেন, কোন শক্তিই আপনাকে বাঁচাতে পারবে না” এরকম ভীতিকর মেসেজ লিখে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দিত। যখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না তখন পোষ্ট অফিসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদার বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠাতো। তবে চিঠি হোক আর মোবাইল মেসেজ হোক চাঁদা দাবির ভাষাটি ছিল খুবই ভীতিকর। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা মানুষেরা ভয়ে কোন কিছু প্রকাশ না করেই যে ভাবেই হোক ইউনুস ডাকাতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করত। যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী খার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ইউনুস ছিল সবার ছোট। তাই পিতা মাতার আদরের ছেলে কোরআনে হাফেজ হওয়ার লক্ষ্যে হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করে। ১৩ পারা কোরআন মুখস্থের পর সে হাফিজিয়া মাদরাসা ছেড়ে ভালুকঘর আজিজিয়া দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হয়। একটা সময় সে মাদরাসা ত্যাগ করে বিপথগামী হয়ে যায়। ৮০’ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভালুকঘর এলাকায় জন্ম নেয় আজিজের নেতৃত্বে দূর্ধর্ষ ডাকাত বাহিনী, যার নাম আজিজ বাহিনী হিসাবে সারা দেশে আকশ্মিক পরিচিতি পায়। তৎকালীন সময়ে স্বৈরাচারী সরকারের উপজেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কেশবপুরের প্রায় সকল ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বাহিনী প্রধান আজিজ ও তার সহযোগিরা। ডাকাতি, খুন, লুটপাট, ধর্ষনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা এই বাহিনীর দ্বারা ঘটেনি। পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলায়ও আজিজ আতংকিত নামে পরিণত হয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও প্রাণভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী আজিজকে রুখতে হিমশিম খেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রনে আনতে ভালুকঘর বাজারে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। এরপর থেকে আজিজ দলবল নিয়ে এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কলারোয়া পাটকেলঘাটা এলাকায় অবস্থান করে কেশবপুর এলাকায় অপরাধ করতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে ১৯৯৬ সালে আ’লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাধারন ক্ষমা ঘোষনার সুযোগে আজিজ তার সহযোগিদের নিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের লক্ষ্যে জেলহাজতে চলে যায়। কিছুদিন জেল খাটার পর বেরিয়ে এসে আবারো যথা পূর্বং তথা পরং” ভাবে পুরনো পেশায় ফিরে যায়। এভাবে চলতে চলতে ২০০৯ সালে কেশবপুরের সাতবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতিকালে বাহিনী প্রধান আজিজ গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর ইউনুস দলের নেতৃত্ব নিয়ে ডাকাতি, খুন, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ তার হাতে খুন হয় উপজেলার চালিতাবাড়িয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত কুন্ডু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল জলিল ২য় মেয়াদে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে আসার পর উপজেলার আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কাজ শুরু করেন। যোগদানের কয়েকদিনের পর ১৫ ফেব্র“য়ারী আজিজ বাহিনী আরেক দূর্ধর্ষ ডাকাত ২৩ মামলার আসামি রজব ডাকাত ওরফে কালা রজব পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে ইউনুস ডাকাত এলাকা ছেড়ে শার্শা ঝিকরগাছা এলাকায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই সে বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইউনুস ডাকাতের সকল জারিজুরি পেছনে ফেলে সোমবার গভীর রাতে নিজেই হারিয়ে গেছে। স্বস্তির সুবাতাস বইছে নির্যাতিত এলাকাগুলোতে। এদিকে সোমবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত ইউনুস আলী নিহতের ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় যে দুটি মামলা হয়েছে তার আসামিরা হলো কেশবপুর উপজেলার মীর্জানগর গ্রামের মৃত জাকাত আলীর ছেলে আমিন, দত্তনগর গ্রামের মৃত রফিউদ্দীনের ছেলে আকবর আলী, কেদারপুরের জাকাত আলীর ছেলে রফিক, পাঁজিয়ার আকু মেম্বরের ছেলে তৌহিদ, সদর উপজেলার নতুন খয়েরতলা পালবাড়ি মোড়ের মৃত খায়েরের ছেলে হাসান, মাহিদিয়া গ্রামের হানেফ আলী সরদারের ছেলে আবদুল্যা, শহরের ষষ্ঠীতলার তপন দাসের ছেলে মানিক দাস ও শংকরপুর হারানের বস্তির মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে নজরুল ইসলাম নজু। আসামিরা এখন পর্যন্ত পলাতক বলে পুলিশ জানায়।
কেশবপুরের মোষ্ট ওয়ান্টেড ডাকাত সর্দার ইউনুস বন্দুকযুদ্ধে নিহত ॥ এলাকায় মিষ্টি বিতরন
তন্ময় মিত্র বাপী,কেশবপুর (যশোর) :
যশোর অঞ্চলের ত্রাস পুলিশের মোষ্ট ওয়ান্টেড ডাকাত সর্দার কেশবপুরের ইউনুস আলী ডাকাতি কালে যশোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। সোমবার রাত ২টার দিকে যশোর-মাগুরা সড়কের পাচবাড়িয়া সিনজেনটা ঔষধ কোম্পানির সামনে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধে যশোরের কেশবপুর থানায় পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরনসহ ৪৮ টা মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র সহকারি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে একটি ট্রাকের গতিরোধ করে ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে রাস্তার পাশে বাগানের মধ্যে হাত-পা চোখ বেধে ফেলে রেখে একদল ডাকাত যশোর-মাগুরা সড়কের পাচবাড়িয়া সিনজেনটা ঔষুধ কোম্পানির সামনে রাস্তায় গাছ কেটে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। এসময় টহল পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পেরে বেতার বার্তায় কোতয়ালী থানাকে অবহিত করে। দ্রুত কোতয়ালী থানা পুলিশ তাদের সাথে যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ রাস্তার উপর কেটে ফেলে রাখা গাছ সরাতে গেলেই ডাকাতদল পুলিশের উপর আচমকা বোমা হামলা ও গুলি বর্ষন করে। কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক বিধান কুমার বিশ্বাস জানান, ডাকাতির ঘটনা জানার সাথে সাথে তিনি নিজে এবং চাচড়া ফাড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক শোয়েবউদ্দীন আহমেদ ও উপ-পরিদর্শক জামালউদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি শক্তিশালী টীম ঘটনাস্থলে পৌছানোর সাথে সাথেই বোমা হামলা ও গুলি বর্ষন করতে থাকে। এখানে প্রায় ঘন্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে ডাকাতদল পিছু হটতে বাধ্য হয়। ডাকাতরা ২০/২৫ রাউন্ড গুলি ও ৪/৫ টি শক্তিশালী বোমার বিষ্ফোরন ঘটায়। এসময় পুলিশও শর্টগানের ১৭ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। উভয় পক্ষের গোলাগুলির সময় বোমার ¯িপ্রন্টারের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল (৫৩৪) মোস্তাফিজুর রহমানের ডান পায়ে ক্ষত হয়ে গুরুতর আহত হন। ডাকাতরা কৌশলে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের বাধন খুলে রাস্তার উপর থেকে গাছ সরাতে গেলে গুলিবিদ্ধ আহত এক ডাকাতকে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ফেলে যাওয়া ৪টি তাজা বোমা, ১টি রামদা, ১টি কুড়াল, ২টি শাবল, বিষ্ফোরিত বোমার কিছু আলামত উদ্ধার করেছে। এঘটনায় উপ-পরিদর্শক বিধান কুমার বিশ্বাস বাদি হয়ে ডাকাতির চেষ্টা এবং অস্ত্র আইনে কোতয়ালী মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি ডাকাত সর্দার ইউনুস মারা গেলেও অন্য আসামিরা আটক হয়নি। সহকারি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল জলিলের দেয়া তথ্যে আরো জানান, নিহত ডাকাত ইউনুসের বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ভালুকঘর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা, ২১টি ডাকাতি, ৬টি অবৈধ অস্ত্র, বোমা, চাঁদাবাজিসহ কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর, কলারোয়া, সাতক্ষীরা, তালা, পাটকেলঘাটা থানায় হত্যা, ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র মজুদ, ছিনতাই, অপহরনসহ ৪৮ টা মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি অস্ত্র মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছে। নিহত ইউনুস একসময়ের ভালুকঘর এলাকার ত্রাস ডাকাত আজিজ বাহিনীর দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব পালন করত। ২০০৯ সালে কেশবপুরের সাতবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতিকালে বাহিনী প্রধান আজিজ গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর ইউনুস দলের নেতৃত্ব দিয়ে অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ কেশবপুর পৌরসভার পানি সরবরাহের পাইপ লাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এমপি’র উপস্থিতিতে যশোরের পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান (পিপিএম, বিপিএম,বার) ডাকাত ইউনুসের অবস্থান গোপনে পুলিশকে জানালে ৫০’হাজার টাকা পুরষ্কার দেয়া হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়। মঙ্গলবার বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত ইউনুসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং অনেক জায়গায় মিষ্টি বিতরনের খবরও পাওয়া গেছে।
কে এই ইউনুস ডাকাত ?
“ ভাই সামনে আপনার বড় বিপদ। যা বলি সেভাবে চলেন, আমাকে অবহেলা করলে দুনিয়া থেকে হারিয়ে যাবেন, কোন শক্তিই আপনাকে বাঁচাতে পারবে না” এরকম ভীতিকর মেসেজ লিখে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দিত। যখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না তখন পোষ্ট অফিসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদার বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠাতো। তবে চিঠি হোক আর মোবাইল মেসেজ হোক চাঁদা দাবির ভাষাটি ছিল খুবই ভীতিকর। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা মানুষেরা ভয়ে কোন কিছু প্রকাশ না করেই যে ভাবেই হোক ইউনুস ডাকাতের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করত। যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভালুকঘর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী খার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে ইউনুস ছিল সবার ছোট। তাই পিতা মাতার আদরের ছেলে কোরআনে হাফেজ হওয়ার লক্ষ্যে হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করে। ১৩ পারা কোরআন মুখস্থের পর সে হাফিজিয়া মাদরাসা ছেড়ে ভালুকঘর আজিজিয়া দাখিল মাদরাসায় ভর্তি হয়। একটা সময় সে মাদরাসা ত্যাগ করে বিপথগামী হয়ে যায়। ৮০’ দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভালুকঘর এলাকায় জন্ম নেয় আজিজের নেতৃত্বে দূর্ধর্ষ ডাকাত বাহিনী, যার নাম আজিজ বাহিনী হিসাবে সারা দেশে আকশ্মিক পরিচিতি পায়। তৎকালীন সময়ে স্বৈরাচারী সরকারের উপজেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় কেশবপুরের প্রায় সকল ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বাহিনী প্রধান আজিজ ও তার সহযোগিরা। ডাকাতি, খুন, লুটপাট, ধর্ষনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা এই বাহিনীর দ্বারা ঘটেনি। পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলায়ও আজিজ আতংকিত নামে পরিণত হয়। দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও প্রাণভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী আজিজকে রুখতে হিমশিম খেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রনে আনতে ভালুকঘর বাজারে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। এরপর থেকে আজিজ দলবল নিয়ে এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কলারোয়া পাটকেলঘাটা এলাকায় অবস্থান করে কেশবপুর এলাকায় অপরাধ করতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে ১৯৯৬ সালে আ’লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাধারন ক্ষমা ঘোষনার সুযোগে আজিজ তার সহযোগিদের নিয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে অবৈধ অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের লক্ষ্যে জেলহাজতে চলে যায়। কিছুদিন জেল খাটার পর বেরিয়ে এসে আবারো যথা পূর্বং তথা পরং” ভাবে পুরনো পেশায় ফিরে যায়। এভাবে চলতে চলতে ২০০৯ সালে কেশবপুরের সাতবাড়িয়া এলাকায় ডাকাতিকালে বাহিনী প্রধান আজিজ গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর ইউনুস দলের নেতৃত্ব নিয়ে ডাকাতি, খুন, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ তার হাতে খুন হয় উপজেলার চালিতাবাড়িয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুব্রত কুন্ডু। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল জলিল ২য় মেয়াদে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে আসার পর উপজেলার আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কাজ শুরু করেন। যোগদানের কয়েকদিনের পর ১৫ ফেব্র“য়ারী আজিজ বাহিনী আরেক দূর্ধর্ষ ডাকাত ২৩ মামলার আসামি রজব ডাকাত ওরফে কালা রজব পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলে ইউনুস ডাকাত এলাকা ছেড়ে শার্শা ঝিকরগাছা এলাকায় পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই সে বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ইউনুস ডাকাতের সকল জারিজুরি পেছনে ফেলে সোমবার গভীর রাতে নিজেই হারিয়ে গেছে। স্বস্তির সুবাতাস বইছে নির্যাতিত এলাকাগুলোতে। এদিকে সোমবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত ইউনুস আলী নিহতের ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় যে দুটি মামলা হয়েছে তার আসামিরা হলো কেশবপুর উপজেলার মীর্জানগর গ্রামের মৃত জাকাত আলীর ছেলে আমিন, দত্তনগর গ্রামের মৃত রফিউদ্দীনের ছেলে আকবর আলী, কেদারপুরের জাকাত আলীর ছেলে রফিক, পাঁজিয়ার আকু মেম্বরের ছেলে তৌহিদ, সদর উপজেলার নতুন খয়েরতলা পালবাড়ি মোড়ের মৃত খায়েরের ছেলে হাসান, মাহিদিয়া গ্রামের হানেফ আলী সরদারের ছেলে আবদুল্যা, শহরের ষষ্ঠীতলার তপন দাসের ছেলে মানিক দাস ও শংকরপুর হারানের বস্তির মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে নজরুল ইসলাম নজু। আসামিরা এখন পর্যন্ত পলাতক বলে পুলিশ জানায়।